দীনা ও নওশীন দুইজন বান্ধবী। তাদের বন্ধুত্ব শুধু কলেজের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা একে অপরের জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ। তাদের মধ্যে দীনা একটু সাহসী এবং রহস্য প্রেমী, আর নওশীন খুব মিষ্টি এবং বুদ্ধিমতী। একদিন কলেজের আজাতুর রহমান লাভলু স্যারের ইতিহাসের প্রজেক্টের জন্য তাদেরকে একটি গ্রামে যেতে হয়। গ্রামটির নাম “জামতৈল”, নামের মতোই গ্রামটি দেখতে খুবই শান্ত, কিন্তু স্থানীয়দের মুখে এর পিছনে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য।
গ্রামে পৌঁছানোর পর তারা স্থানীয় এক বৃদ্ধ মহিলার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে। বৃদ্ধা তাদের সতর্ক করে বলেন, “এই গ্রামে অনেক রহস্য আছে, বিশেষ করে সেই পুরানো বাড়িটা। সেখানে যেও না।” কিন্তু দীনার কৌতূহল আরও বেড়ে যায়। সে নওশীনকে বলে, “চল, আমরা সেই বাড়িটা একবার দেখে আসি। কে জানে, হয়তো আমাদের প্রজেক্টের জন্য কিছু ভালো তথ্য পেতে পারি।”
নওশীন প্রথমে রাজি না হলেও দীনার জিদের কারণে রাজি হয়ে যায়। তারা বিকেলে সেই পুরানো বাড়ির দিকে রওনা দেয়। বাড়িটি অনেক পুরানো, দেয়ালে জঙ্গল গজিয়েছে, জানালাগুলো ভাঙা। ভেতরে ঢুকতেই তারা অনুভব করে যেন কেউ তাদের অনুসরণ করছে। হঠাৎ দরজা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। নওশীন ভয়ে কাঁপতে থাকে, কিন্তু দীনা তাকে সাহস দেয়।
তারা বাড়ির ভেতরে এগোতে থাকে। হঠাৎ দীনা মাটিতে একটি পুরানো চাবি পায়। চাবিটি দেখে নওশীন বলে, “এটা দিয়ে কিছু খোলা যেতে পারে।” তারা বাড়ির প্রতিটি জায়গা খুঁজে খুঁজে শেষে একটি তালাবদ্ধ করা আলমারি পায়। চাবিটি দিয়ে আলমারি খোলার পর তারা একটি পুরানো ডায়েরি পায়। ডায়েরিটি পড়ে তারা জানতে পারে যে এই বাড়িতে এক সময় একটি পরিবার থাকত, কিন্তু তারা রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়। ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা ছিল, “এই বাড়িতে একটি অভিশাপ আছে। যে এখানে আসবে, সে অভিশপ্ত হবে।”
দীনা ও নওশীন বুঝতে পারে যে তাদের এই অভিশাপ ভাঙতে হবে। তারা স্থানীয় বৃদ্ধার কাছে ফিরে যায় এবং সব কথা খুলে বলে। বৃদ্ধা তাদের বলে যে, এই বাড়িতে এক সময় একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তার নাম ছিল পৃথা। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা নিখোঁজ হয়ে গেলে পৃথা বাড়িটিতে একাই থাকতো। পৃথার প্রেমিক তাকে প্রতারণা করেছিল, এবং সে দুঃখে আত্মহত্যা করে। তার আত্মা এখনও বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়।
দীনা ও নওশীন পৃথার আত্মার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। তারা একটি আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং পৃথার আত্মাকে শান্তি দেয়। অনুষ্ঠানের শেষে তারা লক্ষ্য করে যে বাড়িতে পৃথার কিছু তৈলচিত্র ছিলো যা অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারা বুঝতে পারে পৃথার আত্মা এখন শান্তি পেয়েছে।
এরপর থেকে সেই বাড়িতে আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটে না। দীনা ও নওশীন তাদের প্রজেক্ট শেষ করে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ফিরে যায় এবং শিক্ষক ও সহপাঠীদের বলে। তারা এই ভৌতিক অভিজ্ঞতা কখনো ভুলতে পারে না এবং তারা এটাও বুঝতে পারে যে একসাথে থাকলে কোনো রহস্যই তাদের কাছে অসম্ভব নয়।
The post ভৌতিক এক বাড়িতে… appeared first on Bangladesh Diplomat | বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট.